মৌলভীবাজারে জীবিতদের মৃত দেখিয়ে ভাতা থেকে বাদ দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ, মে ২৩, ২০২৪

মৌলভীবাজারে জীবিতদের মৃত দেখিয়ে ভাতা থেকে বাদ দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

সিলেট স্টারঃ মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বয়স্কভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী চারজনকে মৃত দেখিয়ে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ূম।

জানা যায়, জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম শিলুয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে মো. এনামুল হক ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে কয়েক মাস ভাতা না পাওয়ায় ভাতার বই নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে ভাতা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কার্যালয় থেকে বলা হয়, এ কার্ডের মালিক মারা গেছেন, তিনি আর ভাতা পাবেন না।

এ সময় এনামুল বলেন, এ কার্ডের মালিক আমি স্বয়ং আপনার সামনে জীবিত দাঁড়িয়ে, আমি মারা গেলাম কীভাবে? তখন বলা হয়েছে, আপনি ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করুন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ূমের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন বয়স্ক, বিধবা এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বয়স্কভাতা ১৩৮ জন, বিধবা ২২ জন ও অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ১০ জনসহ ১৭০ জন মৃত ভাতাভোগী পাওয়া যায়। তাদের স্থলে নতুন সমানসংখ্যক ভাতাভোগীর তালিকা তৈরি করে তা প্রতিস্থাপনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ৬নং ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন ও চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ূম স্বাক্ষরিত ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্রে এনামুল হক ০৫/০৪/২০২১ইং তারিখে মৃত্যুবরণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়। একই তারিখের অপর পৃথক তিনটি প্রত্যয়নপত্রে ছায়রা বেগম, পিতা- আলী, গ্রাম- মাগুরা ১০/০২/২০২১ইং, শারিজুন নেছা, স্বামী- মৃত মস্তকিন আলী, গ্রাম- গোয়ালবাড়ি ০৩/০৭/২০২১ ইং ও শ্রী অঞ্জলী রানী দেব, পিতা- বীরেশ চন্দ্র সেন, গ্রাম- মাগুরা ১৭/০৫/২০২২ইং তারিখে মৃত্যুবরণ করেন উল্লেখ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়।

জীবিতদের মৃত দেখিয়ে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ূম ও ৬নং ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন একতরফা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়কে দায়ী করেন।

তারা বলেন, সমাজসেবা কার্যালয় থেকে উপরোল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে মৃত্যুসনদ দেওয়ার জন্য আমাদের বলা হলে আমরা তা দিই। পরে জানতে পারলাম উনারা জীবিত। তখন নতুন করে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে তাদের ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ করা হয়। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে অনলাইন মৃত্যু নিবন্ধন ছাড়া তাদের মৃত্যুর তারিখ কোথায় পেলেন? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

জুড়ী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্দিষ্ট সময় পর পর সকল ভাতাভোগীদের হালনাগাদ তথ্য সকল ইউনিয়ন পরিষদে চাওয়া হয়। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা যাচাই-বাছাই করে মৃত্যুসনদ/প্রত্যয়নপত্রসহ মৃতদের বাদ দিয়ে নতুনদের তালিকা পাঠান। সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিই। অনেক সময় কিছু মেম্বার অবৈধ লেনদেন করে জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে বাদ দিয়ে অন্যকে তালিকাভুক্ত করেন। এখানে সমাজসেবা কার্যালয়ের কোনো দায় নেই। গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে যাদের মৃত দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তাদের পুনরায় ভাতার আওতাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, ঘটনাটি সত্য হলে অন্যায় হয়েছে। বিষয়টি জরুরিভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে বলে দিচ্ছি।