ঈদে ভ্রমণ হোক শ্রীমঙ্গলে

প্রকাশিত: ৩:১১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০২২

ঈদে ভ্রমণ হোক শ্রীমঙ্গলে

এম বাংলা ডেস্কঃস্বল্প ছুটিতে বেড়ানোর চমৎকার একটি জায়গা শ্রীমঙ্গল। মৌলভীবাজারের অন্তর্গত শ্রীমঙ্গল চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। শ্রীমঙ্গলের প্রায় ৪৩ শতাংশ জড়েু চা বাগান। রূপশ্রী শ্রীমঙ্গলকে যে একবার দেখবে, তার বারবার দেখতে মন চাইবে। আমাদের আজকের গন্তব্য শ্রীমঙ্গলে। চলুন জেনে নেই শ্রীমঙ্গলে বেড়ানোর খুটিনাটি।

চা বাগান

শ্রীমঙ্গলে যেদিকেই যান না কেন চা বাগান চোখে পড়বেই। শ্রীমঙ্গল উপজেলার উঁচু-নিচু ঢেউ খেলানো টিলার গায়ে চা বাগানের সৌন্দর্য্য, এক কাপ চা পান করার মতোই আপনার মন সতেজ করে তুলবে। এ সময় চা বাগান কঁচি সবুজ পাতায় পরিপূর্ণ থাকে এবং চাপাতা সংগ্রহের কাজ চলে। ফলে চারপাশে নরম সবুজের সমারোহ ভালো লাগবেই। এখানে চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) ও ফিনলের চা-বাগান রয়েছে। ভানুগাছ সড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলেই দেখা মিলবে জেরিন টি-এস্টেটের। এছাড়া লাউয়াছড়ার কিছুটা আগেই ডান দিকের জঙ্গলঘেরা পথ নিয়ে যাবে নূরজাহান টি-এস্টেটে। এখানে দেখা যাবে, চা পাতা তোলার দৃশ্য। জেনে নিতে পারেন চা শ্রমিকদের দৈনন্দিন জীবনকাহিনী।

মাধবপুর লেক-শ্রীমঙ্গলে এসে মাধবপুর লেকের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য না দেখলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। লেকটির অবস্থান কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে। ভানুগাছ সড়ক হয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবপুর লেকের দূরত্ব ২৫ কিমি। চারদিক পাহাড়ে ঘেরা এ লেকটি উপর থেকে দেখতে অনেকটা বহুপদি এমিবা বা কাঁকড়ার মতো। গুগল থেকে দেখে নিতে পারেন।

লেকটির দিকে তাকালে প্রথমেই আপনার চোখে পড়বে পাড় ঘেঁষে ফুটে থাকা নীল শাপলা ফুল, লেকের কাকচক্ষু জলে আরেকটি আকাশ। টিলায় টিলায় সাজানো সুদৃশ্য চা বাগানে ঘেরা স্বচ্ছ পানির এই হ্রদটি ১৯৬৩ সালে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয় যার দৈর্ঘ্য ৩ কিমি এবং গড় প্রস্থ ১৭৫ মিটার।

 

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য। এটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই বনে দেখা মেলে নানা বিরল প্রজাতির পশুপাখির। আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টার তিনটি ট্রেইল ধরে ঘুরে দেখতে পারেন পাহাড়ি টিলাঘেরা, বনলতায় আচ্ছাদিত সবুজ বনানী। ছমছমে শুড়িপথ সবুজাভ আলোয় আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক অপার্থিব জগতে। নিসর্গ ভ্রমণের জন্য এর থেকে সেরা আর কিছু হয় না। বুনোপথের দু’পাশ জুড়ে চোখে পড়বে, কীটপতঙ্গ, নানারকম গাছপালা; ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা মিলতে পারে উল্লুক আর চশমা হনুমানের। ট্রেইলে ট্রেকিং এর জন্য গাইড ভাড়া পাবেন এখানে। বনের ভেতরে বেশকিছু পাহাড়ি ছড়াও রয়েছে যার একটির নামেই এই বনের নাম ‘লাউয়াছড়া’। বনের ভেতর হারিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ পেয়ে যেতে পারেন রাবার বাগান, লেবু বাগান অথবা একটি ছড়া। ছড়ার পানিতে পা ভিজিয়ে চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে যদি ঢুকেই যান কোনো পান বাগানে দেখে নিতে ভুলবেন না সংলগ্ন খাসিয়াপুঞ্জি। পান যাদের প্রধান ফসল ও আয়ের উৎস। হারিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি পছন্দ না হলে সোজা পথেও লাউয়াছড়া পার হয়ে খাসিয়াপুঞ্জিতে যেতে পারেন।

সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা

সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা আরেকটি মজার জায়গা। নানা প্রজাতির পশুপাখি দেখবেন এই সুন্দর পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি উদ্যোগে গড়া চিড়িয়াখানায়। বিশেষ করে নজর কাড়বে চকচকে কালো পশমের ভালুক। সাথে গুরুগম্ভীর ঈগল প্রজাতির পাখি আর ভদ্রগোছের কিছু লেজ ঝোলা বানরের দেখাও পাবেন এখানে।

শহরে একটি রাবার বাগান আছে, এই পথ ধরেই যেতে হবে সাতরং চায়ের দোকান ‘নীলকণ্ঠ টি কেবিন’ এ আর রামনগর মণিপুরী পাড়ায়- তাদের বানানো বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখতে ও কিনতে। সাতরং চা খেতে কেমন সে আপনার বিবেচ্য, তবে মণিপুরী তাঁতবস্ত্র যে খুবই মনোহর সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, বিশেষ করে মণিপুরী শাল, মনিপুরী শাড়ি, ওড়না বা গামছা। বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রেরও দেখা মিলবে এখানে।

শ্রীমঙ্গলে আরো আছে চা জাদুঘর, বিজিবি পার্ক, লাল পাহাড়, হামহাম ঝরনা, লাসুবন গিরিখাদ, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ; ভ্রমণের ব্যপ্তিকাল ও পছন্দ অনুযায়ী ঠিক করে নেবেন কোন কোন জায়গা আপনার ভ্রমণ তালিকায় রাখবেন।

আর/ইউ