সদকাতুল ফিতর আদায় করবেন যেভাবে

প্রকাশিত: ৮:১৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৫, ২০২১

সদকাতুল ফিতর আদায় করবেন যেভাবে

নগর বার্তা ডেস্কঃ সদকাতুল ফিতর পরিচয় : ‘সদকাতুল ফিতর’-এ দুটি আরবি শব্দ রয়েছে। সদকা মানে দান, আর ফিতর মানে রোজার সমাপন বা ঈদুল ফিতর। অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিন আদায় করা সদকাকেই সদকাতুল ফিতর বলা হয়। এটিকে জাকাতুল ফিতর বা ফিতরাও বলা হয়ে থাকে।ইসলামী শরিয়ত মতে, সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। পবিত্র হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন ও নারী-পুরুষ সবার ওপরই এটি ওয়াজিব। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ১৫১২)

যে কারণে সদকাতুল ফিতর দিতে হয় :

জাকাতের মতো সদকাতুল ফিতরও একটি আর্থিক ইবাদত। পবিত্র মাহে রমজানে সিয়াম পালন করতে গিয়ে সাধারণত আমাদের অনেক ভুলত্রুটি হয়ে যায়। সেই ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ হিসেবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি ইবাদতের নাম সদকাতুল ফিতর। এটি পরম করুণাময় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পবিত্র উপহারও বটে।সদকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য শুধু ‘গরিবদের ঈদের খুশিতে শরিক করা’ বলে যে ধারণা প্রচলিত রয়েছে, তা যথার্থ নয়। কেননা হাদিস শরিফে সদকাতুল ফিতরকে কাফফারাতুন লিসসাওম—অর্থাৎ রোজা অবস্থায় অবচেতনভাবে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যায়, তার কাফফারা বা ক্ষতিপূরণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সদকাতুল ফিতর কার ওপর ওয়াজিব :

সদকাতুল ফিতরের নিসাব জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ। অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যাঁর ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল ক্বাদির : ২/২৮১)। এমনকি পবিত্র রমজানের শেষ দিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে কিংবা কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১৯২)

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ :

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে শরিয়তে দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা হচ্ছে ‘এক সা’ বা ‘নিসফে সা’। খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দ্বারা আদায়ের ক্ষেত্রে এক ‘সা’=৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়)—অর্থাৎ তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। এ ছাড়া গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে ‘নিসফে সা’=১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম, অর্থাৎ এক কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি প্রযোজ্য হবে। (আওজানে শরইয়্যাহ, পৃ. ১৮)রাসুল (সা.)-এর যুগে মোট চারটি পণ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা হতো। খেজুর, কিশমিশ, জব ও পনির। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমাদের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্য দ্বারা সদকা আদায় করতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (সহিহ বুখারি)উল্লিখিত খাদ্যবস্তুর পরিবর্তে সেগুলোর কোনো একটিকে মাপকাঠি ধরে তার মূল্য আদায় করলেও তা আদায় হয়ে যাবে।  মূল্যের দিক থেকে ওই খাদ্যবস্তুগুলোর মধ্যে তফাত থাকলেও সবচেয়ে কম দামের বস্তুকে মাপকাঠি ধরে যদি কেউ ফিতরা আদায় করে দেয়, তাহলেও তা আদায় হয়ে যাবে। বর্তমান বাজারদর হিসাবে যেহেতু গমের দামই সবচেয়ে কম, তাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর আধা ‘সা’ গমকে মাপকাঠি ধরে ওই সময়ের বাজারদর হিসাবে তার মূল্য ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ ঘোষণা করা হয়। এ বছর তা ৭০ টাকা। তবে এর মানে এই নয় যে ধনীরাও তাদের ফিতরা ৭০ টাকাই আদায় করবেন। উত্তম হলো, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মূল্যের খাদ্যবস্তুকে মাপকাঠি ধরে ফিতরা আদায় করা। কেননা সদকার মূল লক্ষ্যই হলো গরিবদের প্রয়োজন পূরণ ও তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ।এ ছাড়া আদায়কারীর সামর্থ্যকেও বিবেচনায় রাখা উচিত। কেননা কেউ পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের খেজুর খেতে অভ্যস্ত হয়ে যদি ২৫-৩০ টাকা মূল্যের গমের হিসাবে ফিতরা দেন, তবে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে প্রশ্ন বিবেকের কাছে থেকেই যায়। যদিও শরিয়তে সর্বনিম্ন মূল্যে ফিতরা আদায় করার দরজা খোলা রাখা হয়েছে।

সদকাতুল ফিতর আদায়ের সময় : পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। তবে জাকাতের মতো সে সময়ের আগে রমজান মাসেও তা আদায় করা যায়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে সদকাতুল ফিতর আদায় করার তাওফিক দান করুন।