সিলেটে সক্রিয় অটোরিক্সা চোরচক্র, ১ কারাগারে বাকিরা পলাতক

প্রকাশিত: ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪

সিলেটে সক্রিয় অটোরিক্সা চোরচক্র, ১ কারাগারে বাকিরা পলাতক

সিলেট স্টার প্রতিনিধিঃ সিলেট মহানগরীতে পুলিশে পৃথক অভিযানে আন্ত:জেলা সিএনজি অটোরিকশা চোর চক্রের ১ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তি এয়ারপোর্ট থানাধীন লালবাগ ( ৩ নং ওয়ার্ডের) মৃত মকরম মিয়ার ছেলে জালাল মিয়া ( ৩৫ ) কে
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেট নগরী ৫ নং ওয়ার্ডের কলবাখানি এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নাম্বারবিহীন সিএনজি ৪ টি সিএনজি জব্দ সহ জালাল কে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নামে বে নামে কাগজপত্র বিহীন সিএনজি ও গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আন্ত জেলা সিএনজি চোর চক্রের কাছ থেকে কিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় তা কম টাকায় বিক্রি করে আসছে বলে জানা যায়।

তারই ধারাবাহিকতায় সিলেট বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে আন্তজেলা চক্রের কাছ থেকে এসব সিএনজি এনে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সহজ সরল নিরহ মানুষদের কাছ তা বিক্রি করে আসছে।
এমনই এক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখের পরিকল্পনায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে নাম্বার বিহীন এসব সিএনজি অটোরিক্সাসা আটক করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ৪ টি সিএনজি আটককৃত আসামী জালাল মিয়া এসব গাড়ি কয়েকজনের আর্তিক সহযোগীতায় সিএনজি ক্রয়-বিক্রয়ের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।
এয়ারপোর্ট থানাধীন এলাকার আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তা এস আই সুজিত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উদ্ধার হওয়া গাড়িগুলো খুব শীঘ্রই সিলেট বি আর টি এর মাধ্যমে যাচাই-বাচাই করে আসামী সহ আটককৃত গাড়ি গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।
উল্ল্যেখ্য,এর আগে আসামী জালাল সহ আরও বেশ কয়েকজন আসামী সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলায় কারাগারে ছিলেন,আটককৃত জালালের সিএনজি ক্রয়-বিক্রয়ের মূল ব্যাবসায়িক পার্টনার নগরীর নয়াসড়ক এলাকার আল-হেলাল ৩০নং বাসার আব্দুন নূরের ছেলে আব্দুস সামাদ ফাহিমের ( ৩২ ) কাছ থেকে সাংবাদিক রুহিন আহমদ একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কেনেন তিনি সেকেন্ডহ্যাণ্ড সিএনজিচালিত অটোরিকশা ক্রয়-বিক্রয় করেন। বেশ কয়েকটি সিএনজি দেখান ফাহিম। তবে বিভিন্ন সমস্যার কারণে তিনি ভালো ও সমস্যাবিহীন অটোরিকশা (নং সিলেট থ -১১-৯৮১২) নম্বেরর গাড়ি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রিয় করেন রুহিনের কাছে।

এ ব্যাপারে গত ১৩ মার্চ গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের একটি অঙ্গীকারনামা সম্পন্ন করে ফাহিম রুহিনের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ ও অটোরিকশা হস্তান্তর করেন। অটোরিকশাটি সার্ভেসিংয়ে নিয়ে গেলে ধরা পড়ে যে ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর পাঞ্চ করা। এরপর রুহিন আরও কয়েকটি সার্ভেসিং সেন্টারে নিয়ে গেলে একই ফলাফল জেনে তার মাথায় হাত। ঘটনাটি জানানোর পর আসে হুমকি ধমকি। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তারা রুহিনকে হত্যার হুমকি দেন।

তিনি আরও কয়েকদিন পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এয়ারপোর্ট থানায় দায়েরকৃত চোরাই অটোরিকশা ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত একটি মামলায় (নং ৪৮/২০২৩) ফাহিম কারাগারে আর সুমন আত্মগোপনে।এরপর ফাহিম জামিন পেয়েছেন এমন সংবাদ পেয়ে গত ৯ এপ্রিল রুহিন কয়েকজন স্বাক্ষীকে নিয়ে তার বাড়ি গেলে ফাহিম আবারও তাকে হুমকি ধমকি দিয়ে বিদায় করেন। এসময় তার বাড়িতে আরও বেশ কয়েকটি নম্বরবিহীন অটোরিকশাও তারা দেখে গোপনে ভিডিও ও ছবি তুলে রাখেন।

এ ব্যাপারে রুহিন সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ১২ এপ্রিল একটি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন (নং ২৩২/২০২৩)।

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোতোয়ালী মডেল থানার সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রিপন গত ১৮ এপ্রিল দিবাগত গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সুমন ও ফাহিমকে গ্রেফতার করেন।

এ সময় তাদের সাথে থাকা সিলেট থ ১২-৫২৮২ নম্বর অটোরিক্সা (চেসিস নম্বরবিহীন) উদ্ধার করেন। সেদিনই ভোরের দিকে অভিযান চালিয়ে শাহীঈদগাহ থেকে সিলেট থ ১২-৪৮০৩ নম্বরের আরেকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে আরও বেশ কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাগজপত্র ও উদ্ধার করা হয়েছে।

জানা গেছে, জালাল,ফাহিমের মতো সিলেটে আরও অন্তত অর্ধশত সিএনজি অটোরিকশা চোর সক্রিয়। তাদের কাছ থেকে অটোরিকশা কিনে প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। চোরাই অটোরিকশাগুলোতে ব্যবহৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলো প্রকৃতপক্ষে বিআরটিএ থেকে সংগ্রহ করা হয়নি। বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাই ও নম্বরবিহীন অটোরিকশা সংগ্রহের পর বিআরটিএর বাতিল করা রেজিস্ট্রেশন নম্বর সংগ্রহ করে তারা। তারপর জালিয়াতির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জাল ডকুমেন্ট প্রস্তুত করে ভূয়া ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর খোদাই করে বসিয়ে তাদের প্রতারণা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালী থানার এসআই রিপন জানান, দুটি গাড়ি আটক করেছি তাদের নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু সিএনজিচালিত অটোরিক্সা নামে বে নামে সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন জায়াগায় চলছে। সেগুলো ধরতে পুলিশ তৎপর।