আহমদ আল কবীর বিএনপি নেতা হারিস চৌধুরীর এজেন্ট ছিলেন-মাসুক উদ্দিন

প্রকাশিত: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০২৪

আহমদ আল কবীর বিএনপি নেতা হারিস চৌধুরীর এজেন্ট ছিলেন-মাসুক উদ্দিন

 নিজস্ব প্রতিবেদক: কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ ত্রিধারায় বিভক্ত। এসব বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন হাফিজ আহমদ মজুমদার, মাসুক উদ্দিন আহমদ ও আহমদ আল কবির। এ কারণে এবার আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর সুবিধা পেতে পারেন হুছামুদ্দীন।

 

সিলেটের জেলার ছয়টি আসনে সবসময় সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে ইসলামি দলগুলো ভোটের মাঠে সাধারণ জনগণের কাছে এক বটবৃক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ারপর পর অনুষ্ঠিত সব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর বড় আলেম উলামারা এই সংসদ আসনে সংসদ সদস্য নতুবা দ্বিতীয় হয়েছেন।

তবে এবার ভোটের মাঠে অন্যরকম চিত্র দেখা যাচ্ছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্বা মাসুক উদ্দিন আহমদের ( নৌকা ) প্রতীকের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী  আনজুমানে আল ইসলাহের সভাপতি  ইসলামি চিন্তাবিদ হুছামুদ্দীনের ( কেটলি ) প্রতীকের হাড্ডা হাড্ডি লড়াই  আভাস মিলছে।

 

বিভিন্ন ভোটারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এ আসনে মোট প্রার্থী রয়েছেন সাতজন। তবে লড়াই হবে  নৌকা,কেটলি,ট্রাক। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী (কেটলি) ও আহমদ আল কবিরের (ট্রাক) এই ৩ প্রতীকের মধ্যেই মূলত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানান সাধারণ ভোটার।

 

 

তবে এবার স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র বলছে, ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের ওবায়দুল হক এবং ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ওবায়দুল্লাহ ফারুক দ্বিতীয় এবং সপ্তম ও নবম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী দ্বিতীয় হন।

স্বাধীনতার পর সিলেট-৫ আসনে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার জাতীয় পার্টি, একবার করে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে বিগত সব কটি সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতারা এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উল্লেখযোগ্য ভোট পান। ফলে এখানে ভোটের মাঠে বরাবরই ইসলামি দলগুলোর ‘নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক রয়েছে বলে ধারণা করছে একাধীক সুত্র।

 

ভোটার ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ।

তবে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আহমদ আল কবির। স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন আনজুমানে আল ইসলাহের সভাপতি  হুছামুদ্দীন চৌধুরী। তাঁর প্রয়াত বাবা আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী সারা দেশে পীরে কামেল এবং উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুর্জুগ বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবী( ফুলতলী) হুজুর হিসেবে পরিচিত। আবদুল লতিফের তৈরি করা সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহের অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ রয়েছেন দেশ-বিদেশে । ফুলতলী অনুসারীদের সিলেট-৫ আসনে রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক।

 

তবে এবার নির্বাচনে হুছামুদ্দীন চৌধুরী নিজেই প্রার্থী হওয়ায় এলাকা ঘিরে ইতিমধ্যে জয়লাভের আলোচনা শুরু হয়েছে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ  সংসদীয় আসনে।

 

 

আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ অন্য প্রার্থীরা পড়েছেন বেকায়দায় । এরইমধ্যে  ৫ ডিসেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে হুছামুদ্দীন চৌধুরীর সাক্ষাৎ ঐ আসনে শুরু করে দেয় নতুন জল্পনা-কল্পনা বৈঠকের পর থেকে হুছামুদ্দীনের নির্বাচনী এলাকায় তাঁর অনুসারীরা বিষয়টিকে জয়ের ইঙ্গিত হিসাবে  নির্বাচনী আসন ঘিরে চলছে জমজমাট প্রচার-প্রচারণা

 

এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ এখন তিনটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে মাসুক উদ্দিন আহমদ ও আহমদ আল কবিরের পক্ষে দুটি পক্ষ সক্রিয়। তবে আরেকটি বৃহৎ অংশ ভেতরে-ভেতরে সক্রিয় হয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন  হুছামুদ্দীনকে নিয়ে।

 

 

হুছামুদ্দীনকে সমর্থন দিয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ গত বেশ কয়েকটি এলাকায় কেটলি প্রতীকের পক্ষে প্রচার মিছিল করেছে।নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও  ওপর মহলের চাপে আওয়ামী লীগের ওই পক্ষ হুছামুদ্দীনের পক্ষে কাজ করছে বলে একাধীক সূত্র দাবি করেছে। তবে এই  ওপর মহল  নেতারা কারা তা কিন্তু খোলাসা করতে রাজি হননি তারা ।

 

নৌকার প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ আলাপকালে জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী নব্য আওয়ামীলীগ নেতা আহমদ আল কবীর একসময়ের ক্ষমতাশালী বিএনপি নেতা হারিস চৌধুরী যিনি  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। ঐ সময় আহমদ আল কবির ছিলেন হারিস চৌধুরীর নির্বাচনী এজেন্ট । হুট করে আওয়ামীলীগে এসেই নৌকার জন্য মনোনয়ন চান তিনি, না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক মার্কায় নির্বাচন করছেন। তবে আমি এসব প্রার্থীকে তেমন শক্ত প্রার্থী হিসেবে মনে করছি না।জনগন নৌকার পক্ষে উন্নয়নের পক্ষে আবারও ভোট দিয়ে শেখ হাসিনা কে ক্ষমতায় আনবে।

 

অপরদিকে,নৌকার প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ কথা অস্বীকার করে ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী আহমদ আল কবির বলেন,মিথ্যাবানুয়াট তথ্য ছড়াতে কেবল এই সকল প্রার্থীরা প্রচারণা করছে।তবে এসব মিথ্যা তথ্যদিয়ে ট্রাক মার্কার বিজয় টেঁকাতে পারবেন না এসব প্রার্থীরা।