সিলেট ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:০৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০২২
বিশ্বনাথ সংবাদদাতা: সিলেটের বিশ্বনাথে প্রায় সাড়ে তিন বছর পর বহুল আলোচিত চার বছরের শিশুকন্যা খাদিজা বেগম হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে সিআইডি পুলিশ। ওই শিশুকন্যা সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার বীর কলস গ্রামের হাতাগাড়ি চালক শাহিনুর মিয়ার মেয়ে খাদিজা বেগম (৪)। তারা দীর্ঘদিন ধরে স্বপরিবারে বিশ্বনাথ উপজেলার সিঙ্গেরকাছ বাজারে লন্ডন প্রবাসী আব্দুস সালামের বাসার নীচতলায় ভাড়াটিয়া অবস্থায় বসবাস করে আসছিল। ঘাতক ভূয়া চাদশি চিকিৎসক কার্তিক চন্দ্র মিস্ত্রী (৬৫) খাদিজা বেগমকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। কার্তিক চন্দ্র বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার বেদগর্ভ গ্রামের মৃত জগবন্ধু মিস্ত্রীর ছেলে। গত ২৭ নভেম্বর রোববার বিকেলে সিঙ্গেরকাছ বাজার থেকে শিশুকন্যা খাদিজা বেগম হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডির ওসি আশরাফ উজ্জামান। খাদিজা বেগম’কে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে বলে ২৮ নভেম্বর আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক কার্তিক চন্দ্র মিস্ত্রী (৬৫)।
কিন্তু এই মামলার রহস্য উদঘাটন করবেন বলে নিহত খাদিজার বাবা হতদরিদ্র ভ্যান চালক শাহিনুর মিয়াকে কথা দেন এই ওসি। খাদিজার বাবাকে দেয়া কথা রাখতে পেরে ওসি আশরাফ উজ্জামান তার নিজের ফেসবুকে পেজে এক হৃদয়বিদারক স্ট্যাটাস লিখেন। তার এই স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু ধরে তুলা হলো-
সত্য সর্বদা প্রকাশিতব্য- তুষের নিচে আগুন চাপা থাকে না।
এই পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী হলো পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। আর সেই সন্তানের মৃত্যু যদি হয় কোন নির্মমতার শিকার হয়ে। তাহলে সেই কষ্টের কোন সীমারেখা থাকে না। ৩০ শে মে ২০১৯ ভোরবেলা দরিদ্র ভ্যানচালক শাহিন মিয়ার জীবনে নেমে আসে এক অমানিশার অন্ধকার। পেটের দায়ে প্রতিদিনের মতো ভোরবেলা স্ত্রী ও সন্তানদেরকে ঘুমে রেখে ভ্যান গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন পোল্ট্রি খামার থেকে মোরগ পরিবহন করে দোকানে পৌঁছে দেওয়া জন্য বাসা থেকে বের হয়ে যান। তার চার বছর বয়সী দুরন্ত মেয়ে খাদিজা বেগম (৪) অন্যান্য সকাল বেলার মত মা বোনদের ঘুমে রেখে ঘুম থেকে উঠে বাসার বারান্দায় খেলাধুলা করিতেছিল। ভোর অনুমান ৬ ঘটিকার দিকে মানুষরূপী নরপিশাচ কার্তিক চন্দ্র মিস্ত্রি (৬৫) শিশু খাদিজা বেগমকে একা পেয়ে খালি রুমের মধ্যে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। প্রচন্ড ব্যথায় খাদিজা বেগম চিৎকার করিতে চাইলে নরপিশাচ কার্তিক চন্দ্র মিস্ত্রি শিশু খাদিজা বেগমের নাক মুখ চেপে ধরে। মেয়েটির যৌনাঙ্গ রক্তাক্ত হয়ে এবং শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। ওই নরপিশাচ বারান্দা থেকে নাইলনের রশি এবং পুরাতন জামা কাপড় এনে খাদিজা বেগমের গলায় বেঁধে রান্না ঘরের পেরেকের সাথে ঝুলিয়ে রেখে কক্ষটি তালাবদ্ধ করে চলে যায়। ভিকটিমের মা ঘুম থেকে উঠে মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে চারিদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সংবাদ শাহিনের কানেও পৌঁছে যায়। সে ভ্যান গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। মেয়েকে সম্ভাব্য সকল স্থানে খুঁজতে থাকে। কোন সংবাদ না পেয়ে স্থানীয় থানাকে অবহিত করে। সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ইতিমধ্যে বিল্ডিং এর কেয়ারটেকার ঘাতক নরপিশাচ কার্তিক চন্দ্র মিস্ত্রি উপস্থিত পুলিশসহ সকলকে বিভ্রান্ত করিতে থাকে। এক পর্যায়ে খালি কক্ষটি তালাবদ্ধ দেখে সন্দেহ হলে কক্ষের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করিলে হতভাগী খাদিজা বেগমের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। যথা নিয়মে ভিকটিম খাদিজা বেগমের সুরতহাল প্রতিবেদন এবং পোস্টমর্টেম সম্পন্ন করা হয়। দুদিন পর থানায় মামলাও রুজু হয়। থানা পুলিশ তদন্তে নামে। বিভ্রান্তির কারণে ভিকটিম খাদিজা বেগমের পিতা শাহিন মিয়াকেও সন্দেহ পোষণ করে। সাক্ষী হিসেবে নরপিশাচ কার্তিক চন্দ্র মিস্ত্রির বক্তব্যও গ্রহণ করে থানার তদন্তারী কর্মকর্তা। কূলকিনারা করতে না পেরে মামলার তদন্তভার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর মাধ্যমে সিআইডি সিলেট জেলার কাছে হস্তান্তর করে। তৎকালীন সিআইডি সিলেট জেলায় কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক জনাব আব্দুল হাদী সাহেব তদন্তভার গ্রহণ করে সরজমিনে মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মামলার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করেন। কিন্তু অসহায় ভ্যানচালক দিনমজুর শাহিন মিয়ার মেয়ে খাদিজা হত্যাকান্ডের কোন কুল কিনারা হয় না।
ইতোমধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তার সিআইডি মৌলভীবাজার জেলায় বদলি হলে এবং আমি বদলি সূত্রের সিআইডি সুনামগঞ্জ জেলা হতে সিআইডি সিলেট জেলায় যোগদান করিলে মামলার তদন্তভার আমার উপর অর্পণ করা হয়। মামলার তদন্ত গ্রহণ করে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ভিকটিম খাদিজা বেগমের পিতা শাহিন মিয়াকে কথা দিয়েছিলাম সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রেখো। মামলার রহস্য উদঘাটিত হবেই হবে ইনশাল্লাহ। সেদিন আমার কথায় শাহিন মিয়া মনে সাহস পেয়ে আশায় বুক বেঁধেছিল মেয়ে হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য। অবশেষে খাদিজা হত্যার রহস্য উদঘাটিত হলো। তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে নরপিশাচ কার্তিক চন্দ্র মিস্ত্রিকে গ্রেফতার করে ব্যাপক ও নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম খাদিজা বেগমকে ধর্ষণের চেষ্টা করত শ্বাসরোধ করে হত্যা করার কথা স্বীকার করে। নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। উদঘাটিত হয় আরও একটি ক্লুলেস হত্যাকান্ডের ঘটনা। আবারো প্রমাণিত হয় সত্যকে কখনো ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায়না। বৃথা যায় না কখনো একাগ্রচিত্তের চেষ্টা। ধন্যবাদ আমার টিমের সদস্য এএসআই আলাউদ্দিন এবং কনস্টেবল শমসের আলীকে।
সিলেট স্টার নিউজ
সত্যের পথে আপোষহীন ও নিরপেক্ষ অনলাইন ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল
——————————————————–
উপদেষ্টা মন্ডলী সভাপতি
……………………………
——————————————————
ঠিকানাঃ
মোবাইল: 01795396925
ইমেইল: sylhetstar.news@gmail.com
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ রুহিন আহমদ।
সিলেট স্টার নিউজ একটি স্বতন্ত্র অনলাইন ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল।
আমাদের কোন দৈনিক প্রিন্ট ভার্সন নাই।
———————————————————-