মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সুনামগঞ্জের আঁখির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত: ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০২২

মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সুনামগঞ্জের আঁখির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পিতৃহীন মেধাবী আঁখি রানী তালুকদার দারিদ্রতার দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ২০২২ সালের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় ২৭৯৬তম স্থান অধিকার করেছে। ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে। এ মেধাবী শিক্ষার্থীর সফলতায় খুশি এলা কাবাসী ও তার পরিবারে আনন্দের শেষ নেই। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেও অর্থসংকটে ভিটেমাটিহীন দরিদ্র পরিবারের সন্তান আঁখির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, কালো মেঘ ঘিরে রেখেছে তার চারপাশ।

আঁখি রানী তালুকদার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট বাজারে চা বিক্রতা রমেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার (পঠন বাবু) ও মিনা রাণী তালুকদার দম্পতি ছোট মেয়ে। বাদাঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হালিমা খাতুন বলেন,আখিঁ আমার ছাত্র ছিল। ছিল খুবেই মেধাবী। তার এই সাফলতা অর্জন আমার ও আমাদের এলাকার জন্য গৌরবের। অর্থসংকটে তার ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরন হবে না তা মেনে নিতে পারছি না। সবাই যদি তার চিকিৎসক হবার স্বপ্ন টা পূরনে এগিয়ে আসে তাহলে এই অসহায় পরিবারটি উপকৃত হবে।

আখিঁ জানায়, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিও পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই তার পরিবারের। তার বাবা অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বাড়ি বিক্রি করে চিকিৎসা করার পর দীর্ঘদিন যাবৎ শয্যাশায়ী থেকে চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে পরি। তখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তবে দারিদ্রতা মেধাবী আঁখির বিদ্যার্জনে পথ রুখতে পারেনি। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন আঁখি। তার ইচ্ছে বিনা চিকিৎসার তার বাবার মত আর কোন বাবা যেন মারা না যায়। তার জন্য চিকিৎসক হয়ে সেবার হাত বাড়াবেন সবার দিকে।

আঁখির বিধবা মা মিনা রানী তালুকদার তিনি জানান, কোনো কোচিং না করেই তার এই সাফল্য অর্জন। স্বামীর চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করেছি। এখন ভাড়া বাসায় থাকি। চোখের সামনেই সে দেখেছে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় তার বাবা মারা গেছেন। আঁখির আশা চিকিৎসক হয়ে কোন বাবাকেই বিনা চিকিৎসায় মরতে দিবে না। সেবা দিয়ে সাধারণ মানুষে পাশে দাঁড়াবে। সবাইসহযোগিতা করলে আমার মেয়ে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হতে পারবে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল অধম্য মেধাবী পিতৃহীন আঁখি রানী তালুকদারকে বুধবার দুপুরে নিজ কায্যালয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

চেয়ারম্যান জানান, আমি ও আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করব তার চিকিৎসক হবার স্বপ্ন পুরণে।

আঁখির পরিবার থেকে জানা যায়, ২০১২সালে তাহিরপুরের বাদাঘাটে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় আঁখি জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুল বৃত্তি লাভ করেন। ২০১৫ সালে বাবা মারা যাওয়ার দেড় মাস পর জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় আঁখি। আবারো জিপিএ-৫ সহ সাধারণ বৃত্তি লাভ করেন।
২০১৮ সালে উপজেলার স্থানীয় একটি পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে আঁখি ফের জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর সিলেট সরকারি কলেজে এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু অর্থাভাবে একাদশ বর্ষের শুরুতেই টানা আট মাস কলেজে গিয়ে পাঠ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি তার।

এ সময় স্বল্প বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি নেন আঁখির বড়বোন কাজল রানী তালুকদার। এরপর ছোট বোন আঁখিকে গ্রামের ভাড়া বাসা থেকে সিলেট নিয়ে এসে মেসে তুলে কলেজে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যাবার সুযোগ তৈরি করে দেন। ২০২০ সালে সিলেট সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আঁখি ফের জিপিএ-৫ অর্জন করেন।

এমএনআই