ঈগল প্রতীকে ভরাডুবি হয়েছে মুরাদের

প্রকাশিত: ১০:৪০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২৪

ঈগল প্রতীকে ভরাডুবি হয়েছে মুরাদের

সিলেট স্টারঃ জামালপুর-৪ সরিষাবাড়ী আসনে স্বতন্ত্র পদে ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করে ভরাডুবি হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের।

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করে ৩৭ হাজার ৪৩৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। নানা সময়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হয়ে নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ভোটাররা।

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, ২০০৮ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ী থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুরাদ হাসান।

২০১৪ সালে বিরতি দিয়ে ২০১৮ সালে ফের সংসদ সদস্য হন তিনি। ২০১৯ সালে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুরাদ। ওই বছরই তাকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, দলের মধ্যে একক আধিপত্য শুরু করেন মুরাদ হাসান।

সৃষ্টি করেন লাঠিয়াল বাহিনী। দলের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাদের দূরে সরিয়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ না করে হরিলুট শুরু করেন। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তার বাহিনী দিয়ে নিজ দলের লোকদের বিভিন্ন সময় মারধর ও হুমকি-ধমকি দিয়ে পুলিশি হয়রানির ভয়ও দেখানো হতো। তার বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ পরিবেশন করলে গণমাধ্যমকর্মীদের থানায় নিয়ে নির্যাতন চালানোর ঘটনাও ঘটেছে।

তার বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলত না।

এরপর ২০২১ সালে চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের নির্দেশ দেন। তখন এ খবরে তার নির্বাচনী এলাকা সরিষাবাড়ীতে আনন্দ মিছিল করেন আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেফাঁস কথাবার্তা ও নারী কেলেঙ্কারির কারণে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। এর পর থেকে অনেকটা গাঢাকা দেন মুরাদ।

দলীয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে নতুন কমিটিতে ঠাঁই হয়নি মুরাদ হাসানের। নতুন ওই কমিটিতে নাম না থাকায় হতবাক হন তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এর পর থেকে দলের মধ্যে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন মুরাদ হাসান।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান মুরাদ হাসানসহ প্রায় এক ডজন নেতা। মুরাদ হাসানকে বাদ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণী বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান হেলালকে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন মুরাদ।

জামালপুর-৪ সরিষাবাড়ী আসনে নৌকা প্রতীক, দুইজন স্বতন্ত্রসহ মোট সাতজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ (ট্রাক) ৫০ হাজার ৬৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত মাহবুবুর রহমান হেলাল নৌকা প্রতীকে ৪৭ হাজার ৬৩৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মুরাদ হাসান এমপি (ঈগল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে তৃতীয় হন।

স্থানীয় ভোটাররা জানান, মুরাদ হাসান এমপি হয়ে এলাকায় কোনো কাজ করেননি। দলের ত্যাগী কর্মীদের দূরে ঠেলে দিয়ে একক বাহিনী সৃষ্টি করে আধিপত্য বিস্তার করেন। তার কারণে লোকজন তাকে ভোট দেয়নি। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বিভিন্ন সময় বক্তব্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মন থেকেও দূরে চলে যান। এ কারণে নির্বাচনে তিনি পাস করতে পারেননি।

এ ব্যাপারে মুরাদ হাসান বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছি। নৌকা নিয়ে নির্বাচন করলে অবশ্যই জয়ী হতাম। আমার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা নিয়ে নির্বাচন করেছি। আমার প্রতিপক্ষ একজন আওয়ামী লীগের মনোনীত, আরেকজন বিশাল টাকাওয়ালা ও ক্ষমতাধর। নির্বাচনে ভোটারদের টাকা দিয়ে বিজয়ী প্রার্থী ভোট কিনেছে। টাকার ছড়াছড়ি ও ভোট কারচুপি না হলে নির্বাচনের ফলাফল কী হতো এটা সবাই জানে।’