গাড়িতে বিএনপি নেতা কামাল হত্যাকারীদের ‘হাতের ছাপ’

প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২২

গাড়িতে বিএনপি নেতা কামাল হত্যাকারীদের ‘হাতের ছাপ’

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত বিএনপি নেতা আ ফ ম কামালের গাড়িতে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের হাতের ছাপ পেয়েছে পুলিশ। সেগুলো সংগ্রহ করেছে তাঁরা। ছুরিকাঘাতের পর হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা তাড়াহুড়া করে পালাতে গেলে তাদের রক্তাক্ত হাতের ছাপ গাড়ির বিভিন্ন জায়গায় পড়ে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা যে মোটরসাইকেল ইচ্ছে করে সড়কে ফেলে দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছেন, সেটির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আ ফ ম কামাল নিজেই প্রাইভেট কার চালিয়ে সিলেটের বিমানবন্দর সড়ক থেকে বড়বাজারের সড়কে প্রবেশ করেছিলেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল তাঁর পিছু নিয়েছিল। প্রাইভেটকারটি বড়বাজার হয়ে গোয়াইটুলা যাওয়ার পথে বড়বাজার ১১৮ নম্বর বাসার সামনে পৌঁছালে আগে থেকেই সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে অবস্থান করা দুই ব্যক্তি প্রাইভেট কারের সামনে গিয়ে দুর্ঘটনার নাটক সাজান। এ সময় ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। মোটরসাইকেল আরোহীরা চিৎকার ও কথা-কাটাকাটি শুরু করেন। স্থানীয়রা মনে করেছিলেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে প্রাইভেটকারের ভেতরেই আ ফ ম কামালকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান মোটরসাইকেল আরোহীরা। তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে ২৫টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিহত আ ফ ম কামালের বাম হাতে ১৬টি, বাম বগলে দুটি, বাম বুকে একটি ও বাম পায়ে ছয়টি ধারালো অস্ত্র ও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে।

এর আগে, বিএনপি নেতা আ ফ ম কামালের প্রাইভেট কারের পিছু নিয়েছিল দুটি মোটরসাইকেল। ওই দুটি মোটরসাইকেলে তিনজন ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে দূরে থাকা কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পুলিশ এমন তথ্য পেয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ এমনটা জানিয়েছে।

ঘটনার দিন রোববার রাত আটটার দিকে আ ফ ম কামাল সিলেট বিমানবন্দর এলাকার সালুটিকর থেকে সিলেট নগরের বড়বাজার হয়ে গোয়াইটুলার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন তাঁর পেছন পেছন ছিলেন। পরে আরও একটি মোটরসাইকেলে থাকা দুই ব্যক্তি প্রাইভেট কারের গতিরোধ করে তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। প্রত্যক্ষদর্শী ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ এমনটা জানিয়েছে।

ছুরিকাহত আ ফ ম কামালকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আ ফ ম কামাল সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সিলেট ল কলেজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, নিহত আ ফ ম কামাল রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি পাথর ব্যবসা এবং নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি তাঁর ট্রাভেল এজেন্সি থেকে মো. আজিজুর রহমান সম্রাট নামের একজনের আত্মীয়কে সৌদি আরবে এক কাজের কথা বলে অন্য কাজের জন্য ভিসার ব্যবস্থা করে। এ ঘটনায় আজিজুর গত ২১ অক্টোবর আ ফ ম কামালসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এরই জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ধরন দেখে মনে হয়েছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যে স্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। পুলিশ আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।

এদিকে, আ ফ ম কামাল খুনের ঘটনায় প্রায় দুইদিনেও এখনো কোন মামলা হয়নি। আলোচিত এই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানিয়েছেন, ‘আ ফ ম কামাল খুনের ঘটনায় এখনও মামলা না হলেও মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া খুনিদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’