লোডশেডিংয়ে শিডিউল বিপর্যয়

প্রকাশিত: ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২২

লোডশেডিংয়ে শিডিউল বিপর্যয়

এম বাংলা ডেস্কঃআপাতত দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল সরকারের তরফে। সে অনুযায়ী বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি মঙ্গলবার লোডশেডিংয়ের সূচিও প্রকাশ করে। কিন্তু ওইদিন চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন কম থাকায় ওই সূচিও ধরে রাখতে পারেনি বিতরণ কোম্পানিগুলো। এক ঘণ্টার সূচির বিপরীতে কোথাও কোথাও কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়ায় দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ ছাড়া থাকতে হচ্ছে। গতকালও রাজধানীর অনেক এলাকায় সূচির বাইরে কয়েক দফা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। জ্বালানি চাহিদা কমাতে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে গত মঙ্গলবার থেকে উৎপাদন কমিয়ে প্রতিটি এলাকায় আপাতত এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানায় সরকার। ওইদিন সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছিলেন, জ্বালানি স্বল্পতার কারণে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হতে পারে। যদিও মঙ্গলবার পিডিবির হিসাবে সর্বোচ্চ ১৯০০ মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং হয়।পিডিবি সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার পিক আওয়ারের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৪,৪০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে সর্বোচ্চ উৎপাদন ১২৪৮২ মেগাওয়াট ধরা হয়। এ হিসাবে লোডশেডিং হয় ১৯১৮ মেগাওয়াট।গত কয়েক বছরের মধ্যে এটাই দিনে সর্বোচ্চ লোডশেডিং। সোমবার সর্বোচ্চ ১৪,৪০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল ১৩,২৮১ মেগাওয়াট। তখন লোডশেডিং ছিল ১১১৯ মেগাওয়াট। পূর্বাভাস অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না হওয়ায় লোডশেডিংয়ের সূচি এলোমেলো হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন বিতরণ সংস্থা ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা যে শিডিউল করছিলাম, লোডশেডিং তার চেয়ে বেশি হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার ডেসকোকে ৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেছে লোডশেডিং দিয়েছে ১৫০ মেগাওয়াট। পূর্বাভাসের তুলনায় বিদ্যুতের চাহিদা বেশি হওয়ায় লোড শেডিংয়ের সূচি মানা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের বড় সংস্থা ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান। তিনি জানান, গত মঙ্গলবার ১০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যায় সেটি ১২৫ মেগাওয়াটে দাঁড়ায়। তখন আর সূচি ঠিক রাখা যায়নি। ডেসকোর আওতাধীন রূপনগর জোনের ইস্টার্ন হাউজিং এ মঙ্গলবার রাতে দুই দফা লোডশেডিং করা হয়। সূচি ছিল এক ঘণ্টার। প্রথম দফা লোডশেডিং হওয়ার পর অনেকে ধরে নিয়েছিলেন ওই রাতে আর লোডশেডিং হবে না। কিন্তু রাত ১১টায় আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন এক ঘণ্টার মতো লোডশেডিং হয়।গতকাল অবশ্য রাতে একবার লোডশেডিং হয়। মঙ্গলবার ঢাকার মৌচাক এলাকার ডাক্তার গলিতে দুই দফায় ২ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার অন্তত ছয়বার লোডশেডিং হয়। এ কারণে ওই এলাকার বাসিন্দারা নানা ভোগান্তিতে পড়েন। বিদ্যুৎ লাইনের ফ্রিকুয়েন্সি বেড়ে যাওয়ায় সিস্টেম পতন ঠেকাতে রুটিনের বাইরেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডেসকোর বারিধারা জোনের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ছিল সরকারের পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের প্রথম দিন। এদিন গুলশান, বাড্ডা ও ভাটারার কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। সিলেট নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজার থেকে কুমারপাড়া পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের সূচি প্রতিদিন দুই বেলা। দুপুরে দেড় ঘণ্টা ও রাতে দেড় ঘণ্টা। সবমিলিয়ে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করার কথা।প্রথম দিন মঙ্গলবার সূচি অনুযায়ী লোডশেডিং করা হয়েছে। কিন্তু গতকাল থেকে সব ওলট-পালট হয়ে গেছে। প্রতি দুই ঘণ্টা পর এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হয়েছে। সকাল ১১টায় থেকে লোডশেডিং শুরু। এক ঘণ্টা পর ফের দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত লোডশেডিং। সোয়া ৪টা থেকে আবার সোয়া ৫টা পর্যন্ত লোডশেডিং। ওদিকে রংপুরে চাহিদার অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ কারণে ওই এলাকায় দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। যশোর শহরে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা করে দিনে সর্বোচ্চ চারবার লোডশেডিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে বিতরণ সংস্থা ওজোপাডিকো। কুড়িগ্রামে লোডশেডিংয়ে আর তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও যখন তখন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ। সূচি করে লোডশেডিংয়ের প্রথম দিনেই মৌলভীবাজারে বিদ্যুতের লেজেগোবরে অবস্থা ছিল। জেলা সদরে কিছু এলাকায় দেড় থেকে ২ ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং করা হলেও গ্রাম এলাকায় আরও বেশি লোডশেডিং হয়।সুত্রঃমানবজমিন