সিলেটে ৬ উপজেলায় এখনো লাখো মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশিত: ৩:১৫ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২২

সিলেটে ৬ উপজেলায় এখনো লাখো মানুষ পানিবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন করে সিলেটের ৬ উপজেলায় পানি ঢুকছে। কুশিয়ারা নদীর বন্যার নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন লাখ লাখ মানুষ। থমকে যাচ্ছে সিলেটের জনজীবন। এদিকে- নগরে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। পানিবন্দি মানুষের মধ্যে বিশেষ করে খাবার পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অনাহারে, অর্ধাহারে রয়েছে বানভাসি মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সিলেটে নতুন করে কুশিয়ারা নদীতে পানি বেড়েছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় পানি ইতিমধ্যে ডেঞ্জার জোন অতিক্রম করেছে। এছাড়া কানাইঘাটে সুরমা, জকিগঞ্জে অমলসীদ, বিয়ানীবাজারে শ্যাওলা ও সিলেটের সুরমার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কেএম নিলয় পাশা গতকাল জানিয়েছেন, বিভিন্ন স্থানে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অমলসীদে বাঁধ কেটে দেয়ার কারণে পানি ঢুকছে। অন্তত ২০ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

তিনি জানান, যেসব এলাকায় এখনো বাঁধ আছে সেগুলোকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির আশা প্রকাশ করেন তিনি। আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সিলেটে এবার বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। এছাড়া উজানে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত কমে যাবে বলে জানান তিনি। পানি প্রবেশের মুখ সিলেটের জকিগঞ্জ। সুরমার ডাইক উপচে পানি ঢুকে পড়ায় উপজেলার ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌরসভার কাউন্সিলররা জানিয়েছেন, অনেক স্থানে কুশিয়ারার বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তিনি জানান, ঢল অব্যাহত থাকায় অনেক স্থানে বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। জকিগঞ্জ প্লাবিত হওয়ায় শ্যাওলায় পানি বেড়েছে। বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরেও পানি বেড়েছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এদিকে সিলেট নগরে পানি কমছে। তবে এখনো নগরীর উপশহর, ঘাষিটুলা, বেতরবাজার, কানিশাইল, মাছিমপুর, বাণিজ্যিক এলাকা কালীঘাট, সুবহানীঘাট, যতরপুরসহ কয়েকটি স্থানে হাঁটু পরিমাণ পানি রয়েছে। কিছু স্থানে পানি নেমে যাওয়ায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠছে। কালিঘাটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বন্যায় অন্তত তাদের ২০ কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। গোটা কালিঘাটই ছিল পানি নিচে। এ কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বন্ধ থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যাওয়ায় তারা মালামাল সরাতেও পারেননি। কাজিরবাজার এলাকাও পানির নিচে। সিলেট নগরের ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো মানুষ রয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, আশ্রয়কেন্দ্রে যারা আছেন তাদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, বন্যায় যাতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয় সেজন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বন্যার কারণে সিলেট নগরীর ৬ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭৪টিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশনা না থাকলেও পানি উঠে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি সরে গেলে ফের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে। এদিকে জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এমএনআই