ঈদ যাত্রা বঙ্গবন্ধু সেতু ও শিমুলিয়া ফেরিঘাটে জট

প্রকাশিত: ৩:৫৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২২

ঈদ যাত্রা বঙ্গবন্ধু সেতু ও শিমুলিয়া ফেরিঘাটে জট

এম বাংলা ডেস্কঃঈদে ঘরমুখো মানুষ গতকাল শুক্রবার ভোর থেকেই গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটতে শুরু করে। গাড়ির চাপ বাড়লেও মহাসড়কগুলোতে খুব একটা যানজট ছিল না। যাত্রীরা স্বস্তি পেলেও গরমের কারণে কষ্ট করতে হয়। অনেকে ঝামেলা এড়াতে মোটরসাইকেলে গন্তব্যের উদ্দেশে পাড়ি জমায়।মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে গাড়ি ও মানুষের ভিড়ের কারণে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।গতকাল সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে বাসের টিকিট কিনতে যান কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার তরিকুল ইসলাম। হঠাৎ তিনি মত পাল্টে মোটরসাইকেলে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর সঙ্গে সাত বছরের মেয়ে সুমাইয়া, ১০ বছরের ছেলে রাসেল ও স্ত্রী রোখসানা। বাস টার্মিনালের বিপরীত দিকে দুটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে কথা বলেন। ৭০০ টাকা ভাড়ায় পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত যাত্রাপথ ঠিক করেন। স্ত্রী ও মেয়েকে একটি মোটরসাইকেলে তুলে দেন। আর ছেলেকে নিয়ে আরেকটি মোটরসাইকেলে ওঠেন তিনি।বাসের পরিবর্তে কেন মোটরসাইকেলে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাটে যানজট আছে। অনেক সময় লাগবে ফেরি পার হতে। মোটরসাইকেলে পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে লঞ্চে নদী পার হয়ে বাসে চলে যাব। সময় বাঁচবে।

অন্য বছরের চেয়ে এবার ঈদ যাত্রার বাহন হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যাপকভাবে যুক্ত হয়েছে বলে জানান মানিকগঞ্জের পাভেল। তিনি জানান, যাদের সঙ্গে পরিবার নেই তারা মোটরসাইকেলই বেছে নিচ্ছে। এমনকি যাদের ছোট পরিবার তারাও মোটরসাইকেলকে প্রাধান্য দিচ্ছে।ঢাকা থেকে যশোর-খুলনাগামী ঈগল পরিবহনের শাখা ব্যবস্থাপক মনির হোসেন বলেন, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে যানজটের ভয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ যাত্রী এখন ঢাকা থেকে লোকাল বাস, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে পাটুরিয়া গিয়ে লঞ্চে নদী পার হয়। সেখানে লোকাল বাসে উঠে গন্তব্যে যাচ্ছে। সে জন্য এবার গাবতলীতে যাত্রীর চাপ কম।

গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, যে যাত্রীরা অগ্রিম টিকিট নিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারাই গাবতলী টার্মিনালে আসছে। ঝিনাইদহের শৈলকুপার পিয়াস ও আনিস পড়াশোনা করেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুই বন্ধু ভাড়া করা মোটরসাইকেলে যাত্রা করেন পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে। অসহনীয় গরমে পথের ক্লান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে দুজনই জবাব দেন, ঈদ যাত্রায় আবার ক্লান্তি কিসের!তবে ব্যতিক্রম উত্তরাঞ্চলগামী পরিবহনের বেলায়। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পারে প্রায় ২৪ কিলোমিটার এলাকায় যানের ধীরগতির কারণে ওই অঞ্চলগামী বাসের সময়সূচিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ওই অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যেসব বাস রাতে ছাড়ে, সেগুলো সঠিক সময়ে ঢাকায় ফিরতে পারছে না।লালমনিরহাটগামী রোজিনা, কুড়িগ্রামগামী এসএ খালেক, ঠাকুরগাঁওয়ের এবি ও শ্যামলী পরিবহন, জয়পুরহাটের কেয়া, গাইবান্ধার ইউনাইটেড, নাবিল এবং রাজশাহীর হাই ট্রাভেল পরিবহনের শাখা ব্যবস্থাপক ও মালিকরা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের যানজটের কারণে তাঁরা ব্যবসায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।সোনারগাঁর মুগড়াপাড়া থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত যানজট না থাকলেও যানবাহনের ধীরগতির কারণে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কোনো পরিবহন অতিরিক্ত ট্রিপ দিতে পারছে না। কারণ সঠিক সময়ে বাস টার্মিনালে এসে পৌঁছতে পারছে না।

মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি

ভোগান্তি কমাতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ের জন্য স্বাভাবিকের তুলনায় লেন দ্বিগুণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দুটি লেন করা হয়েছে। এর পরও সেতুর পূর্ব প্রান্তের গোলচত্বর থেকে টোল প্লাজা পর্যন্ত মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি।বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাপ বাড়ছে। সেতুর টোল প্লাজার উভয় পাশে ১৮টি পয়েন্টে টোল আদায় করা হচ্ছে। সড়কে যাতে যানজটের সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।গোবিন্দ ঘোষ নামের এক বাসচালক বলেন, ‘মহাসড়কে যানজট নেই। গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা এসেছি মাত্র এক ঘণ্টায়। তবে গরমে যাত্রীরা কষ্টে যাতায়াত করছে। অনেকে আবার পিকআপ ভ্যানের ওপরে বসে রোদে পুড়ে বাড়ি ফিরছে। ’

যানজট নেই গাজীপুরে

প্রতি ঈদে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও টঙ্গী-ঘোড়াশাল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট হয়। তবে এবার সময়মতো ‘সড়ক মেরামত’ ও ‘পুলিশের কঠোর অবস্থানের’ কারণে যানজট খুব একটা হচ্ছে না।সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও তেমন যানজট নেই। মাঝেমধ্যে কয়েকটি জায়গায় যাত্রী ওঠানামার সময় জটলা হলেও ট্রাফিক পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে।

শিমুলিয়ায় মোটরসাইকেলের চাপ

মানুষের স্রোত আর মোটরসাইকেলের চাপে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটে সকালে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। সাহরির সময় থেকেই শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ। একই সঙ্গে হাজার হাজার মোটরসাইকেল ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় থাকে। সকাল ৭টার দিকে ঘাটে কোনো ফেরি না থাকায় ঢাকা থেকে ছুটে আসা যানবাহন আর মোটরসাইকেলে ঘাটের পার্কিং এলাকা ভরে যায়। ওপার থেকে ফেরি আসার অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় যানবাহনগুলোকে। কিন্তু এ সময় গাড়ির চাপ বাড়তেই থাকে। এক পর্যায়ে ঘাট থেকে বাইরে চলে যায় গাড়ির সারি। সকাল ৮টার দিকে ঘাটে কোনো গাড়ি ঢুকতেই পারছিল না। হাজার হাজার মোটরসাইকেলের কারণে গাড়িও ফেরিতে উঠতে পারছিল না।দুপুর ১২টার দিকে প্রশাসনের তৎপরতায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

পাটুরিয়ায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়

পাটুরিয়া ঘাটে সকাল থেকেই লঞ্চ ও ফেরিতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা দেয়। সকালের দিকে দূরপাল্লার বাসের চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাট এলাকা থেকে নবগ্রাম পর্যন্ত অন্তত তিন কিলোমিটার এবং ছোট গাড়ির আড়াই কিলোমিটার পারের অপেক্ষায় দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়।